in-page ads
Uncategorized

বারবারোসলার পর্ব-১ বাংলা সাবটাইটেল

বারবারোসলার

 

 

স্পেনের কয়েকটি জাহাজ ভূমধ্যসাগরের বুক চিরে আপন মনে এগিয়ে চলছে।গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তারা সংবাদ পেয়ে নিশ্চিত হয়েছে,আশেপাশের পঞ্চাশ মাইলের ভেতর কোনো নৌবহরের চিহ্নও নেই।তাই তারা ছিলো একেবারেই নিশ্চিন্ত —কোন উদ্বেগ নেই তাদের মনে।
হঠাৎ,যুদ্ধের বাঁশী বেজে উঠলো।কোত্থেকে যেন উদ্ভব হলো একটা নৌবহর—–জাহাজের সামনে একটি পতাকা উড়ছে সেখানে সোনালি অক্ষরে লেখা, نصر من الله و فتح كبير و بشر، المؤنينঅর্থাৎ,’আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য (আসবে) এবং একটি আসন্ন বিজয় (অর্জিত হবে) আর হে নবি!আপনি মুমিনদের সুসংবাদ দিন।”

কে ছিলো এই নৌবহরের সেনাপতি?
কেনই বা সমুদ্র জুড়ে তাদের অবিরাম ছুটে চলা?

তাহলে চলুন,ফিরে যাই পনেরশো শতাব্দীতে।আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই,পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এডমিরালদের একজনের সাথে ————–

১৪৬২ সাল,এ বছর উসমানি নৌবাহিনী ইতালির নগর রাষ্ট্র জেনোয়ার কাছ থেকে লেসবোস দ্বীপ দখল করে নেয়।লেসবোস অবশ্য বর্তমানে গ্রীসের দখলে।এ যুদ্ধে অনেকের মতোই বীর বীক্রমে লড়াই করেন একজন তুর্কি নাইট।নাম ইয়াকুব আগা।ইয়াকুব খুব সম্ভবত জেনিসারি বাহিনীর সদস্য ছিলেন।
যুদ্ধে বীরত্বের পুরষ্কার হিসেবে ইয়াকুব পেলেন লেসবোসের বনোভা নামের একটি গ্রামের জমিদারি।মূলত সে কারণেই ‘আগা’ উপাধি লাভ করেন তিনি।

১৪৭০ সালের দিকে তিনি বিবাহ করেন একজন স্পেনিশ মুসলিম বিধবাকে।তাদের ঔরসেই জন্মগ্রহণ করেন পৃথিবী বিখ্যাত নৌসেনানী খিযির রইস,অরুজ রইস,তাদের ভাই ইলিয়াস রইস ও ইসহাক রইস।ইসহাক ছিলেন সকলের বড় ভাই।তাই পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেন তিনি।বাকি তিন ভাই ইলিয়াস রইস,খিযির রইস ও উরুজ রইস সমুদ্রে নামেন নিজেদের ভাগ্য অন্বেষণের জন্য।

তিন ভাইয়ের মধ্যে খিযির আলাদা নৌযান নিয়ে সমুদ্রে নামেন,তার ঘাঁটি ছিলো আধুনিক গ্রীসের থেসালোনিকা।বাকি দুই ভাই সিরিয়া,লেপান্টো ইত্যাদি অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম চালাতেন।কিন্তু,তারা দুজনে দুর্ধর্ষ নাইট ‘সেন্ট জনের’বিরুদ্ধে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়েন।তারা প্রাইভেটিয়ার হিসেবে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন।

১৫০০ সালের শুরুতে একটি বাণিজ্যিক মিশন থেকে ফিরছিলেন ইলিয়াস ও অরুজ।কিন্তু, সেন্ট জনের নৌবহর আচমকা তাদের উপর হামলে পড়ে।ইলিয়াস সাহসিকতার সাথে লড়ে শহিদ হয়ে যান আর অরুজ তাদের হাতে বন্দী হয়ে পড়েন।অরুজের নৌবহর সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয় সেন্ট জনের সেনারা।
তিন বছর ধরে বোদরুম নামক একটি দূর্গে তাকে আটক করে রাখা হয়।
এদিকে ভাইয়ের বন্দী হওয়ার সংবাদ পান খিযির।তিন বছর পর ভাইকে উদ্ধার করেন তিনি।বন্দী হওয়ার ফলে অরুজ আর খিযির উভয়েই বুঝেছিলেন তাদের একসাথে কাজ করতে হবে, নতুবা তারা এই বিশাল সমুদ্রের ঢেউয়ের মাঝে মিলিয়ে যাবেন অতিশীঘ্রই।

মুক্তি পেয়ে অরুজ নতুন নৌবহরের খোঁজে লেগে পড়েন।তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন তৎকালীন আনাতোলিয়ার গভর্নর উসমানি শাহজাদা কোরকুত বে।তিনি ১৮ টি ছোট জাহাজ দেন,এরপর ছোটভাই খিযির তার সাথে যোগ দেন নিজস্ব নৌবহর নিয়ে।এভাবে মোটামুটি একটি মাঝারি আকারের নৌবহরের অধিকারী হন অরুজ।এরপর দু’ভাই তিউনিসিয়ার হাফসি রাজবংশের সুলতান আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ চতুর্থ আল মুতাওয়াক্কিলের দরবারে যান। সুলতানের কাছে তিউনিসিয়ার লা গোলেট্টা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি প্রার্থনা করেন তারা।বিনিময়ে মোট আয়ের এক তৃতীয়াংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।সুলতান তাদের আবেদন মঞ্জুর করে নেন।

বিজয় অভিযানঃ
১৫০৪ সালে ‘লা গোলেট্টা’ বন্দরে কার্যক্রম চালানোর অনুমতি পাওয়ার পর উত্তর আফ্রিকায় একটি ঘাঁটি গড়ে তোলা বারবারোসা ভাই দ্বয়ের জন্য সহজ হয়।কারণ, তিউনিসিয়া ছিল উত্তর আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি।১৫০৫ সাল থেকে বারবারোসা ভাইদ্বয় স্প্যানিশ, ইতালীয়সহ খ্রীস্টান নৌবাহিনীর উপর নিয়মিত আক্রমণ শুরু করেন।১৫০৫ সালে তারা সিসিলির বিখ্যাত যুদ্ধ জাহাজ ‘কাভালেরিয়া’ দখল করেন।জাহাজে থাকা ৩৮০ জন স্পেনীয় সৈন্য ও ৬০ জন নাইটকেও গ্রেফতার করা হয়।এ ঘটনার পর বারবারোসা ভাইদ্বয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন।একই বছর তারা ইতালির দ্বীপগুলোতে বেশ কিছু সফল অভিযান চালাতে সক্ষম হন।এসব সাফল্য দেখে ভূমধ্যসাগরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুসলিম নাবিকরা তাদের সাথে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তখন বহু আফ্রিকান,আরবিয় মুসলিম নৌ পেশার সাথে জড়িত ছিলেন।১৪৯২ সালে যখন স্পেন থেকে মুসলিমদের বিতাড়িত করা হলো,তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হল,তখন এসব নাবিক ইমানি দাবীর প্রেক্ষিতে ভূমধ্যসাগরে স্পেন ও খ্রিস্টান নৌযানগুলোর উপর আক্রমণ করতে শুরু করেন।কিন্তু, তারা ছিল একেবারেই বিচ্ছিন্ন, কোনো একাত্মতা ছিলো না তাদের মাঝে।তাই যখন তারা বারবারোসা ভাইদ্বয়ের সাফল্যগাঁথা অভিযানের কথা শুনল,তাদের বীরত্ব,ধর্মভীরুতা এবং একনিষ্ঠতার কথা যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো, তখন একেএকে সবাই তাদের সাথে যোগ দিলো।তুরগুত রইস,হাসান আগা তুশি, সালিহ রইস,কুরতুগলো এরা সবাই ছিলো ভূমধ্যসাগরের উন্মুক্ত তরবারিদের অন্যতম, যারা ইমানের দাবিতে বারবারোসা ভাইদ্বয়ের সাথে যোগ দিয়েছিলেন।

এদিকে ১৫০৯ সালে তাদের সাথে যোগ দেন বড়ভাই ইসহাক।এতে তারা আরো শক্তিশালী হন।স্পেনে তখন মুসলমানদের উপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হচ্ছিল।১৫০৪ থেকে ১৫১০ সালের মধ্যে হাজার হাজার মুসলমানকে তারা স্পেন থেকে আফ্রিকায় বহন করে নিয়ে যান।যা অরুজ রইসসহ বারবারোসা ভাইদেরকে বিখ্যাত করে তোলে।
বারবারোসা ভাইয়েরা ইতালি,স্পেন,জেনোয়া,লিগুরিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে নিয়মিত অভিযান চালানো শুরু করেন।স্পেনের বেশ কয়েকটি বন্দরে গ্যারিলা হামলা চালিয়ে বহু জাহাজ ও সেনাকে আটক করেন।১৫১৫ সাল পর্যন্ত বারবারোসা ভাইয়েরা এসব ভূখণ্ডে সিরিজ হামলা চালাতে থাকেন ও একই বছর উসমানি সুলতান সেলিমের খানের কাছে অরুজ রইস মূল্যবান উপহার পাঠান।জবাবে সুলতান সেলিম খান অরুজ রইসকে দুটি হীরক খচিত তরবারি উপহার দেন।

আলজিয়ার্স (আধুনিক আলজেরিয়া)দখল ও উসমানিদের সাথে চুক্তিঃ

১৫১৬ সালে অরুজ রইস উসমানিয়দের সহায়তায় ডিজেল ও আলজিয়ার্স দখল করতে সক্ষম হন।আলজিয়ার্সের অধিপতি ছিলেন স্পেনিশদের অনুগত।তাই বারবারোসা ভাইয়েরা আলজিয়ার্স দখলে এগিয়ে এসেছিলেন।আলজিয়ার্স দখলের পর অরুজ রইস নিজেকে সুলতান হিশেবে ঘোষণা দেন।কিন্তু,অরুজ রইস বুঝতে পেরেছিলেন তাদের সামনে এমন যুদ্ধ অপেক্ষা করছে,যেখানে তাদের একা লড়াই করা সম্ভব হবে না।আলজিয়ার্স দখলের পর স্পেনের সম্রাট ও রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট চার্লস আলজিয়ার্সে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।বারবারোসা ভাইয়েরা যথেষ্ট সাহসী হলেও, বিশাল খ্রিস্টান বাহিনীর সাথে লড়াই করার মতো সেনা তাদের ছিলো না।তাই ১৫১৭ সালের অরুজ রইস সুলতান উপাধি ত্যাগ করে সেলিম খানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আলজেরিয়াকে উসমানি সাম্রাজ্যের অধিভূক্ত করার আবেদন জানান।এর মাধ্যমে আলজেরিয়া উত্তর আফ্রিকায় প্রথম উসমানি সানজাক এ পরিণত হয়।অরুজ রইস উসমানি সুলতানের পক্ষ থেকে আলজেরিয়ার গভর্নর নিযুক্ত হন।

অরুজ রইস ও ইসহাকের শাহাদাতঃ
উসমানিদের সাথে চুক্তি করার পর বারবারোসা ভাইয়েরা পুরো আলজেরিয়া দখলের উদ্যোগ নেন।১৫১৮ সালে আলজেরিয়ার তালিমসান দখল করে নেন।কিন্তু,কয়েকমাসের মধ্যেই স্পেনিয় সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বিশ্বাসঘাতক মুসলিম আমিরাত বনু হামদ পুনরায় তালিমসান অবরোধ করে বসে।তালিমসান রক্ষা করতে গিয়ে অরুজ রইস ও বড় ভাই ইসহাক শহিদ হন।আধুনিক তুরস্কের তিনটি যুদ্ধ জাহাজ ইসলামের এ মহান নৌসেনাপতির নামে নামকরণ করা হয়েছে।
অরুজ রইস ও বড় ভাই মারা যাওয়ার পর তার সমস্ত মিশনের দায়িত্ব নেন ছোট ভাই খিযির রইস।অরুজ রইসের অসমাপ্ত কাজ সমূহ সম্পূর্ণ করার শপথ নেন খিযির রইস ——-পরবর্তীতে তিনিই হয়ে উঠেন ভূমধ্যসাগরের ত্রাস,সাগরের উন্মুক্ত তরবারি।
তিনিই বিখ্যাত নৌসেনাপতি খায়রুদ্দিন বারবারোসা।

খিযির খায়রুদ্দিন বারবারোসাঃ
বারবারোসা শব্দটির অর্থ ‘লাল দাড়ি’।খিযির ও তার ভাই অরুজের দাড়ি লাল ছিলো বিধায় তারা বারবারোসা ভ্রাতৃদ্বয় নামে পরিচিত হন।অরুজ রইস মারা যাওয়ার পর ১৫১৯ সালে খায়রুদ্দিন বারবারোসা আলজেরিয়ার আলিম,কাজি সহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল ইস্তানবুল প্রেরণ করেন।তিনি আলজেরিয়ার জনগণের পক্ষে সুলতান সালিম খানের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।জবাবে সুলতান সালিম খান আফ্রিকায় জেনেসারি সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন।পাশাপাশি গোলন্দাজ বাহিনী ও সাধারণ সেনাবাহিনীও প্রেরণ করেন।এতে খায়রুদ্দিন বারবারোসার শক্তি বৃদ্ধি পায়।১৫২০ সালে সেলিম খান মারা গেলেও নতুন সুলতান সুলাইমান খান খায়রুদ্দিন বারবারোসার কাছে সাহায্য প্রেরণ অব্যাহত রাখেন।১৫১৯ সালে খায়রুদ্দিন বারবারোসা ফ্রান্সের প্রোভেন্স,টোলন ও ইলেস দ্য হায়ার্সে অভিযান চালান।এভাবে ১৫২১-১৫৩০ সাল পর্যন্ত খায়রুদ্দিন বারবারোসা একাধারে ইতালি,ফ্রান্স,স্পেন,জেনোয়া,ভেনিসে আক্রমণ করেন।তাদের বহু জাহাজ দখল ও বহু জাহাজ তিনি ধ্বংস করে দেন।লাখ লাখ দিনারের স্বর্ণমুদ্রার গণিমত,বন্দীদের থেকে মুক্তিপণ, জিজিয়া,উশর,খারাজ ইত্যাদি নিয়ে খায়রুদ্দিন বারবারোসা আলজেরিয়াকে সমৃদ্ধ দেশ হিশেবে গড়ে তোলেন।সমুদ্রে অভিযান চালানোর পাশাপাশি খায়রুদ্দিন বারবারোসা স্থলপথেও অভিযান চালিয়েছিলেন।আলজেরিয়া সহ আশেপাশের অঞ্চলে যেসব মুসলিম আমিরাত স্পেনিশদের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকতো,খায়রুদ্দিন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে উসমানি সাম্রাজ্যের নামে আরো বহু এলাকা জয় করেন।
পাশাপাশি স্পেন থেকে নির্যাতিত মুসলমানদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছিলেন তিনি।মোট সাত দফায় খায়রুদ্দিন বারবারোসা হাজার হাজার মুসলিম কে আফ্রিকায় পৌঁছার ব্যবস্থা করেন।

১৫৩১ সালে সম্রাট চার্লসের নৌসেনাপতি আন্দ্রে ডোরিয়ার মুখোমুখি হন খায়রুদ্দিন বারবারোসা।স্পেনের চল্লিশটি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে আন্দ্রে ডোরিয়া কে লজ্জাজনক পরাজয় উপহার দেন তিনি।

সুলতান সুলাইমানের সাথে সাক্ষাৎঃ
১৫৩২ সালে সুলতান সুলাইমান খান অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন।এ সুযোগে আন্দ্রে ডোরিয়া মোরিয়া উপকূলে কোরন,প্যাট্রা ও লিপান্টো দখল করে।পরবর্তীতে সুলতান একজন পাশাকে পাঠিয়ে এসব অঞ্চল দখল করে নিলেও তিনি অনুধাবন করেন,এ অঞ্চলে একজন শক্তিশালী নৌসেনাপতি প্রয়োজন।যিনি ভূমধ্যসাগরে উসমানিয়দের প্রভাব প্রতিপত্তি সবসময় বজায় রাখবেন।এ উপলব্ধি থেকে সুলতান ১৫৩২ সালে খায়রুদ্দিন বারবারোসা কে ইস্তানবুলে আসার আদেশ দেন।সুলতানের পত্র পাওয়ার পর তার অনেক সহচর তাকে যেতে নিষেধ করেছিলেন।তারা ধারণা করেছিলেন,হয়তো সুলতান তাকে ফাঁসি দিতে পারেন।কিন্তু খায়রুদ্দিন বারবারোসা বলেছিলেন,’আল্লাহ যদি মৃত্যু নির্ধারন না করে তাহলে কে তাকে হত্যা করবে?’
১৫৩২ সালের আগস্টে ২৫ টি জাহাজ নিয়ে খায়রুদ্দিন বারবারোসা ইসতানবুলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।১৫৩৩ সালের জানুয়ারীতে তিনি সুলতানের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
সে দৃশ্যটি বড়ই মোহনীয় দৃশ্য ছিলো-ইসলামের দুই মহান সেনানায়ক একে অপরের মুখোমুখি হয়েছেন।একজন স্থলপথের সিংহ আর অন্যজন সমুদ্রের ঈগল।সুলতান খায়রুদ্দিন বারবারোসা ‘কাপুদানে দরিয়া’ তথা সর্বোচ্চ নৌসেনানায়ক পদে আসীন করেন।উসমানিয় সাম্রাজ্যের পক্ষে আফ্রিকার গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন তিনি।এককভাবে তিনি সুলতানের প্রতিনিধিত্ব করার সম্মান লাভ করেন।খায়রুদ্দিন বারবারোসাকে ইস্তানবুলের অস্ত্রাগারের প্রধানও নিযুক্ত করা হয়।
সুলতান ও বারবারোসা উভয়ে সিদ্ধান্ত নেন যে,আফ্রিকায় স্পেন,ইতালির ব্যবহার করা প্রত্যেকটি দূর্গ ও বন্দর দখল করে নেওয়া হবে।এটি ছিলো একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ।এর জন্য বিরাট নৌবহরের প্রয়োজন ছিলো।কিন্তু,সুলতান ও খায়রুদ্দিনের প্রচেষ্টায় তা অনেকটা সহজ হয়ে যায়।১৫৩৪ সালে ৮৪ টি জাহাজের বিশাল নৌবহর নিয়ে খায়রুদ্দিন পাশা ইস্তানবুল ত্যাগ করেন।১৫৩৪ সালের ২ আগস্ট তিনি ও সিনান পাশা তিউনিসিয়া দখল করে নেন।

ইতালিঃবারবারোসার অপূর্ণ স্বপ্ন

১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল জয় করে সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ বলেছিলেন,আগামী কয়েক বছর পর রোমের গির্জা আমার দখলে থাকবে।কিন্তু,সেটি আর হয়ে উঠেনি।সুলতান এর কয়েকবছন পরেই মৃত্যুবরণ করেন।খায়রুদ্দিন বারবারোসা গ্র্যান্ড এডমিরালের দায়িত্ব নেওয়ার পর
ইতালি জয়ের স্বপ্ন আবারো জেগে উঠে।খায়রুদ্দিন বারবারোসা ইস্তাম্বুল থেকে ফিরে এসে ১৫৩৭সালে ইতালিতে অভিযান শুরু করেন।প্যাট্রা,লিপান্টো বন্দর দখলে নেন তিনি।তারপর ইতালির আরো ভেতরে অভিযান শুরু করেন খায়রুদ্দিন বারবারোসা।এত দ্রুত গতিতে এগিয়ে গিয়েছিলেন যে,রোমের গির্জায় ঘন্টা বেজে উঠলো।অন্যদিকে উসমানি সেনাপতি লুৎফি পাশার সেনারা স্থলপথে ইতালির গ্রামাঞ্চলে ঢুকে পড়ে।সুলতান সুলাইমান খান ফ্রান্সের সাথে চুক্তি করেছিলেন যে,তারা অপর দিক থেকে ইতালির উপর আক্রমণ চালাবে।১৫৩৭ সালের জুলাইয়ে সুলাইমান খানের মূল বাহিনী আসার অপেক্ষা করছিলো,ঠিক তখনই ফ্রান্স চুক্তি ভঙ্গ করে।খায়রুদ্দিন বারবারোসার ও উসমানি সাম্রাজ্যের বহু নৌযান ধ্বংস করে দেওয়া হয়।বিক্ষুব্ধ খায়রুদ্দিন বারবারোসা সিসিলিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ফিরে আসেন।পরবর্তীতে ইতালির ওট্রান্টো দখল করে নিয়েছিলেন খায়রুদ্দিন পাশা।বহু বছর ধরে এ শহরটি উসমানিদের অধীনে ছিলো।

প্রিভেজার যুদ্ধঃ
খায়রুদ্দিন বারবারোসা ভূমধ্যসাগরে খ্রিস্টান রাষ্ট্রগুলোর জাহাজ চলাচল একেবারেই অসম্ভব করে তুলেছিলেন,তাদের ব্যবসা বাণিজ্যিের বারোটা বাজিয়ে দেন তিনি।ভেনিস ও জেনোয়ার ক্ষতি ছিলো সবচেয়ে বেশি।তাই তারা পোপ তৃতীয় পলের কাছে খ্রিস্টান হলি লিগ গঠনের আবেদন জানায়।১৩৩৮ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ পোপ তৃতীয় পল খ্রিস্টান হলি লিগ গঠন করতে সক্ষম হন।বারবারোসার সাথে ছিলেন তুরগুত রইস,সালিহ রইস,সাবান রইস,পুত্র হাসান পাশা সহ অন্যান্যরা।খ্রিস্টান হলি লিগের কমান্ড ছিলো দুর্ধর্ষ সেনাপতি আন্দ্রে ডোরিয়ার কাছে।১৩৩৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সাত সাতটি রাজ্যের নৌবাহিনীর মুখোমুখি হন খায়রুদ্দিন বারবারোসা।তার কাছে ছিল ১২২টি গ্যালে ও গ্যালিয়ট অন্যদিকে খ্রিস্টান হলি লিগের যুদ্ধ জাহাজ ছিলো তিনশোর বেশি।
আইনয়োনিয়ান সাগরের বিক্ষুব্ধ ঢেউয়ের মতই খায়রুদ্দিন বারবারোসার ভাগ্য দুলছিল সেদিন।তুরগুত রইস,সালিহ রইস,হাসান পাশাদের বীরত্বে খ্রিস্টান হলি লিগকে বিধ্বস্ত করেন খায়রুদ্দিন পাশা।উসমানি নৌবাহিনীর কোন জাহাজই খোয়া যায়নি সেদিন।অন্যদিকে হলি লিগের ১৩ টি জাহাজ ধ্বংস ও ৩৬টি জাহাজ আটক করা হয়।আন্দ্রে ডোরিয়া পালিয়ে যান।
এ যুদ্ধের পর ভূমধ্যসাগরে উসমানিদের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয়।খায়রুদ্দিন বারবারোসা এজিয়ান সাগর ও আইয়োনিয়ান সাগরের অবশিষ্ট খ্রিস্টান চৌকিগুলো দখল করে নেন।

মৃত্যুঃ
প্রিভেজার যুদ্ধের পর খায়রুদ্দিন বারবারোসা ১৫৩৯ সালে ২০০ টি জাহাজ নিয়ে মন্টিনিগ্রোর কাস্টেলনিউভো দূর্গ অবরোধ করেন ও সেটি বিজয় করে নেন।ভূমধ্যসাগরের নিয়ন্ত্রণে এই দূর্গটির বেশ গুরুত্ব ছিলো।১৩৪৪ ও ৪৫ সালে বারবারোসা ইতালির দীপপুঞ্জে ঝটিকা অভিযান চালান ও বহু দূর্গ জয় করেন।বয়সের ভারে ক্রমাগত দূর্বল হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
১৫৪৫ সালে একমাত্র পুত্র হাসান পাশাকে আলজেরিয়ার শাসক মনোনিত করে খায়রুদ্দিন বারবারোসা ইস্তাম্বুলে ফিরে আসেন।বসফরাস প্রণালীর অদূরে আধুনিক বুয়ুকদারিতে একটি প্রাসাদে বসবাস করতে শুরু করেন এ মহান নৌসেনাপতি।অবসর নেওয়ার পরও উসমানি সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার ব্যাপক প্রভাব ছিলো।
১৫৪৬ সালের ৪ জুলাই ৬৭ বছর বয়সে খায়রুদ্দিন বারবারোসা ইস্তাম্বুলেই মৃত্যু বরণ করেন।
আধুনিক ইস্তাম্বুলের বেসিকতাস জেলায় চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তিনি।

হয়তো ইতালি,স্পেন,ফ্রান্সের এমন কোনো দ্বীপ বাকি নেই যেখানে এ মহান নৌসেনাপতির কদম পড়েনি।জীবদ্দশায় পুরো ইউরোপের নৌবহরের সাক্ষাৎ বিপদ ছিলেন তিনি।আজও তারা খায়রুদ্দিন বারবারোসার বিভীষিকা কে ভূলতে পারেনি।তাই তো,ইউরোপিয়ানরা তাকে পরিচয় করিয়েছে ভয়ংকর জলদস্যু হিসেবে।

Related Articles

24 Comments

    1. 1DM Browser টি ডাউনলোড করুন।সেখান থেকে http://www.onubadmedia.com/ এ এসে যে ভিডিও ডাউনলোড করতে চান সেটা প্লে করুন। উপরে ডান পাশে ডাউনলোড এর মতো একটা চিহ্ন আছে। সেখানে লাল রঙএ ১,২,৩,৪,৫,,,, এরকম কিছু লেকগা আসলে ক্লিক করুন। এর পর যেরকম রেজ্যুলেশন ডাউনলোড করবেন সিলেক্ট করে ডাউনলোড দিন। হয়ে যাবে

    2. অনুবাদ মিডিয়া ফেসবুক পেজের প্রথম পোস্ট এ ভিডিও দেয়া আছে। দেখে নিন

  1. কখন আপলোড হবে সময় দেওয়া উচিৎ ছিলো আমরা অপেক্ষারত☺️

  2. আপনাদের সাইট থেকে কুরুলুস ওসমানের সিজন গুলো দেখা যাচ্ছে না।

  3. ভাই। কখন আপলোড হবে।সময় দিলে ভাল হতো অপেক্ষার প্রহর গুনতে হতো না।

  4. এখান থেকে download করতে অনেক সময় লাগছে । ফেসবুক এ দেওয়া যেত না ভাই??

  5. অনুবাদ মিডিয়ার সকলকে অনেক ধন্যবাদ। সাবটাইটেলে Shadow ব্যবহার না করে Transparent রাখলে ভালো হতো ( আমার এমনটাই মনে হয়েছে)। শুভ কামনা রইলো

  6. অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার প্রিয় ” অনুবাদ মিডিয়ার ” সকল ভাইদেরকে। আপনাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বহুল আলোচিত এই ঐতিহাসিক সিরিজটি আজকে থেকে আমরা বাংলা সাবটাইটেল পাচ্ছি।
    সপ্তাহে কয়টি করে পাবো যদি একটু বলতেন প্লিজ।

  7. গুগল ড্রাইভে আপলোড করলে ডাউনলোড করতে সুবিধা হত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button